গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ঃ
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ব্যানারে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ সোহেল রানা’র নাম না থাকায় রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার নেতৃত্বে ৪০/৫০জন ইউএনও’র অফিসকক্ষে ঢুকে অশোভন আচরণ ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি কাজে বাঁধা, ইউএনও ও সরকারি কর্মকর্তাদের লাঞ্চিত করার অভিযোগে রোববার রাতে গৌরীপুর থানায় মামলা হয়েছে। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি/২০২১) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, রাতে থানায় মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
এদিকে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে শহরের স্টেশন রোড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা জানান, রাজস্ব ফাণ্ড, টিআর-কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয় নিয়ে ইউএনও’র সঙ্গে আভ্যন্তরিন দ্বন্দ্ব চলছিলো। তিনি নানা প্রকল্পের নাম দিয়ে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছেন। এ সব জানতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। দু’একটা প্রোগ্রামের ব্যানারে নাম দিয়েছেন। কিন্তু ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানের ব্যানারে আমার নেই কেন বলতেই তিনি ক্ষেপে যান, উচ্চবাচ্য করে রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার কথা বলে অশোভন আচরণ করেন। তিনি আরো বলেন, আমার জনপ্রিয়তার ঈর্ষান্বিত হয়ে কোন মহলের ইন্ধনে হয়তো ইউএনওকে দিয়ে এ মামলা করিয়েছেন। মামলা হওয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি।
ইউএনও হাসান মারুফ বলেন, একুশের সকালে ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল রানাকে সঙ্গে নিয়ে বিডি কিèনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছি, মনোমালিন্য বা বিরোধ থাকার কোন কারণ নেই। প্রকল্প সংক্রান্ত এ অভিযোগও সত্য নয়।
মামলা ও ইউএনও অফিস সূত্র জানায়, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুষ্ঠানের ব্যানারে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা’র না থাকায় রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৪০/৫০জন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে ঢুকেন। ব্যানারে নাম নেই কেন? এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে ইউএনও’র টেবিলে থাপ্পড়, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। তাদের অশোভন আচরণ ও অযোক্তিক দাবির কারণে ভাষাদিবসের অনুষ্ঠান প্রায় এক ঘন্টা বন্ধ থাকে। ইউএনও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাবলে তাদেরকে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার কথা বললেও সরে যায়নি, বরং বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মারতে উদ্ধত হন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করলে প্রাননাশের হুমকি দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা ও তার সহেযাগীদের কার্যকলাপ সরাসরি সরকারি ও রাষ্ট্রীয় কাজে বাঁধা প্রদান ও সরকারি কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার শামিল।
মামলার তদন্তকারী অফিসার গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা (৩৫), সহনাটী গ্রামের মোঃ আব্দুল মান্নানের পুত্র পলাশ (২৭), পাছার গ্রামের আরশেদ আলীর পুত্র গোলাপ মিয়া (২৬), কৃষ্ণনগর গ্রামের মোঃ আব্দুল কদ্দুসের রেজাউল ইসলাম পলাশ (২৮), চরঘোড়ামারার আবুল কাশেমের পুত্র হোসাইন মাহমুদ (২৭), পানাটি গ্রামের মৃত মাজু মিয়ার পুত্র কাজী সোহেল (২৯) ও অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০জনকে আসামী করা হয়েছে।